বেনজীরের ব্যবসায়িক পার্টনার রাসেল এর ইউসিবিএল ব্যাংক দখলের পায়তারা চলছে
বিশেষ প্রতিনিধি ::
অনৈতিক ভাবে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ( ইউসিবিএল) দখলের অভিযোগ উঠেছে । আর এসব অভিযোগে তীর বেনজীরের এক সময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার প্রভাবশালী শওকত আজিজ রাসেলের বিরুদ্ধে। অনিয়মের ফাঁদ পেতে বিভিন্ন ভাবে তিনি ব্যাংক দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে। এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
ইউসিবি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আ.লীগ সরকারের পতনের পর নামমাত্র শেয়ারের থাকা শওকত আজিজ রাসেল পুরো ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে নিজের মালিকানায় নিতে পাঁয়তারা করছে। ইউসিবি ব্যাংক দখলের চেষ্টা করায় সকল শেয়ারহোল্ডার, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউসিবি ব্যাংক যেনো তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের কামনা করছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে ঋণ অনিয়মের অভিযোগে রয়েছে শওকত আজিজ রাসেল বিরুদ্ধে। যার কারণে অনেক বার রাসেলকে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। কিন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিবারই তিনি দুদককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে । এছাড়াও আজিজ পারিবারিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক এবং আইডিএলসি ব্যবহার করে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে। শওকত আজিজ রাসেলের প্রতিষ্ঠান "অ্যাম্বার"' একটি আর্থিকভাবে ব্যর্থ কোম্পানি যার জন্য তিনি এই দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ক্ষতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা করেছেন। অ্যাম্বার ওভারসিজের মতো কোম্পানি ব্যবহার করে তিনি রিয়েল এস্টেট কিনেছেন। দুদকের একটি অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাসেল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যংকে তাদের চার হাজার কোটি টাকা বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে।
রাসেল ও রুবেলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণ দেয়া ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমেক জানিয়েছেন, এমএ হাশেম দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। উদ্যোক্তা হিসেবে তার উজ্জ্বল ভাবমূর্তির কারণে ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে জামানত ছাড়াই ঋণ দিয়েছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে পারটেক্স গ্রুপের সুনামও ছিল। কিন্তু রাসেল ও তার ভাই রুবেল আজিজের প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তাতে ঋণ আদায় নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে ব্যাংকে এ দুই সহোদরের প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের কিস্তি বকেয়া হতে শুরু করেছে। করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নীতিছাড়ের কারণে তাদের ঋণ এ মুহূর্তে খেলাপি হচ্ছে না। তবে আগামী বছর থেকে রাসেল-রুবেলের প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারী সব ব্যাংককেই ভুগতে হবে।
দুদকের আরেকটি সূত্র জানিয়েছেন, রাসেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পাশাপাশি জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে রাসেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগে উল্লেখ্য রয়েছে, অনিয়ম করে শওকত আজিজ ও আশফাক আজিজের নামে রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে ২০ কাঠার দুটি প্লট হাতিয়ে নেয়। পরে এবিষয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী, শওকত আজিজ এবং তার ভাই রুবেল আজিজসহ রাজউকের ছয়জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। শওকত আজিজ পারটেক্স গ্রুপের পরিচালক থাকা অবস্থায় আরো প্লট বরাদ্দে অনিয়মের রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
অন্যদিকে, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের জন্য যাদের জমি দখল করা হয়েছে সেই সব ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তৎকালিন পুলিশের প্রধান বেনজিরের ক্ষমতার ব্যবহার করে ভাওয়াল রিসোর্টের পাশেআশে অনেক জমি দখলে নিয়েছে। এবিষয়ে একটি দেওয়ানি মামলা হয়েছে। কিন্তু শওকত আজিজ রাসেল নতুন ফাঁদ পেতে আবার দখলের চেষ্টা করছে। জীপুরের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা রয়েছে । মামলার প্রধান আসামি হলেন আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেল। অন্য আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম মাস্টার, ভাওয়াল রিসোর্টের ব্যবস্থাপক সুমন ও মোঃ কামরুল ইসলাম। মামলার নথি থেকে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলার নলজাহনি গ্রামের বারইপাড়া মৌজার বাদীর ১.০২ একর সম্পত্তি বিবাদীরা ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। তাদের অভিযোগ, রিসোর্টের জন্য স্থানীয় অনেক অসহায় মানুষের জমি জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা বলেছেন, প্রাক্তন বেনজীর আহমেদ ভাওয়াল রিসোর্টের ২৫% কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই মালিক হয়েছেন।
সকল অভিযোগের বিষয়ে শওকত আজিজ রাসেলের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।