প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরাসকমের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট ::
প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরাসকম লিমিডেটের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-৭৪৪) করেছেন ঢাকা ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁইয়া।
অভিযোগে জানা যায়, বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরাসকম লিমিডেট বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারির কাজ করে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্বাক্ষর জালিয়াতি, বড় বড় প্রকল্পের ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া শ্রমিকদের মারধর, বিদেশে টাকা পাচারসহ এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আছে আ'লীগ সরকারের সময়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার মতো অভিযোগ। এই প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে রিপ্রেজেনটিভ কাউসার আলম চৌধুরী ও তার কনসালটেন্ট নুর মোহাম্মদের প্রতারণার কারণে মেট্রোরেল লাইন-১ কাজ ডুবতে বসেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মেট্রোরেল লাইন-১-এর টেন্ডার প্যাকেজ-৮ (সিপি-৮) এর একজন প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কন্ট্রাক্ট প্যাকেজের নোটিফিকেশন পত্র জারি করে ওরাসকম। সেই পত্র দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভুয়া চুক্তি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ঢাকা ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁইয়ার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া পত্র তৈরির বিষয়ে তিনি রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওরাসকম লিমিটেড মেট্রোরেল লাইনের ১ (সিপি ৮) এর ট্রেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। মূল্যায়ন কমিটির সভায় তাদের বাতিল করে দেওয়া হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে প্রতিষ্ঠানটি নোটিফিকেশন পত্র তৈরি করে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ বিষয়ে এমআরটি লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক কাশেম ভুইয়া জানান, এই প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ এর প্রি- কোয়ালিফিকেশন মূল্যায়নের নোটিফিকেশন পত্র জারি না করার আগেই তার স্বাক্ষর জাল করে ওরাসকম নিজেদের নামে ভুয়া প্রি-কোয়ালিফিকেশন মূল্যায়নপত্র তৈরি করে। পরে তারা এই ভুয়া প্রি-কোয়ালিফিকেশন মূল্যায়নপত্র দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'স্বাক্ষর জাল করায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। আমি মনে করি এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ এই জালিয়াতি করে তারা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে আরও বড় ধরনের জালিয়াতি ঘটাবে।'
ওরাসকমের প্রতারণার শিকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন মালিক বলেন, 'এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ ৮ ওরাসকম কোয়ালিটি পূর্ণ না হওয়ার কারণে মূলায়ন কমিটি তাদের বাতিল করে দেয়। তারপরেও তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাদের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিনামা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওরাসকম আমাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য মেট্রোরেল লাইন ১ (এক) সিপি-৮ জাল নোটিফিকেশন পত্র দেখায় সেটা বিশ্বাস করে আমরা অগ্রিম টাকা দিয়ে এখন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি। ওরাসকম অন্য প্রকল্পের কাজ দেওয়ার কথা বললেও তা করছে না এবং আমাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।'
সূত্র জানায়, ভুয়া কার্যাদেশ ও চুক্তিনামা করে ওরাসকম হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে- আলম ট্রেডার্স, তাইবা ট্রেডার্স, সরকার আউটসোর্সিং, জেনেক্স ইনফেকশন লিমিটেড, মক্কা-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল।
এর মধ্যে আলম ট্রেডার্সের সঙ্গে প্রায় ১২ কোটি টাকার চুক্তিনামা সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাইবা ট্রেডার্স সঙ্গে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার চুক্তিনামা, সরকার ট্রেন্ডিং ও আউটসোর্সিং কাছ থেকে ৬০ জন ম্যানপাওয়ারের চুক্তিনামা, মক্কা-মদিনা ট্রেডার্সের কাছ থেকে পাথর ও বালু নেওয়ার জন্য চুক্তিনামা করেছে। এছাড়াও আরও ডজন দু'য়েক প্রতিষ্ঠানের থেকে ভুয়া চুক্তিনামা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। চুক্তিনামায় কাউসার আলম চৌধুরী ও ওরাসকমের কনসালটেন্ট নূর মোহাম্মদের স্বাক্ষর রয়েছে।
এ বিষয়ে ওরাসকমের বাংলাদেশের রিপ্রেজেনভিট কাউসার আলম চৌধুরী দৈনিক গণ্যমাধ্যমে জানান, ওরাসকমের নামে কেউ ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করলে দায়ভার ওরাসকম নেবে না। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ হয়তো প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এজন্য আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বিশেষ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সুকৌশলে মানি লন্ডারিং করে যাচ্ছে। যা অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো ডকুমেন্টেশন পাওয়া যায় না। যদি এই ধরনের অভিযোগ আসে তাহলে দুদকের উচিত এই বিষয়ে অনুসন্ধান করা।'